অপহৃত জাহাজের বাংলাদেশি ২৩ নাবিক মুক্ত, যেভাবে ডলার দেয়া হয় জলদস্যুদের

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০৪
...
দীর্ঘ ৩১ দিন পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেলেন বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহর’ ২৩ নাবিক। সঙ্গে ছাড়া পেয়েছে জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ও। বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে এ খবর নিশ্চিত করেছে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।

কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, অল্প কিছুক্ষণ আগে আমরা সুসংবাদ পেয়েছি। আমাদের জাহাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৩ নাবিককেই অক্ষত অবস্থায় আমরা ফেরত পেয়েছি। রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

তিনি জানান, ঈদের আগেই নাবিকদের ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু কিছু জটিলতায় সময় পরিবর্তন হয়। অতীতে জাহান মণির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত সময়ে ২৩ নাবিককে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

মিজানুল ইসলাম আরও জানান, মুক্ত হওয়া ২৩ নাবিককে বিমানে চট্টগ্রামে নেওয়া হবে। চট্টগ্রামে পৌঁছানের পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা ফিরবেন স্বজনদের কাছে। আর উদ্ধার হওয়া জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ যাবে দুবাইয়ে।

এর আগে ডলারভর্তি ৩টি ব্যাগ পাওয়ার পর শনিবার বিকেল ৪টায় ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ত্যাগ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তবে মুক্তিপণ হিসেবে জলদস্যুদেরকে কতো ডলার দেওয়া হয়েছে কিংবা তারা চেয়েছিল কতো, তার কিছুই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে জানানো হয়নি জাহাজটির মালিকপক্ষ থেকে।

গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর তারা জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। নিজ দেশের উপকূলে নেওয়ার নয় দিনের মাথায় দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নানা পর্যায়ে দর-কষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল বলে ঈদের আগেই আভাস দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ।


যেভাবে ডলার দেয়া হয় জলদস্যুদের
ব্যাগভর্তি ডলার মুক্তিপণ দেয়ার পর ছাড়া পেল সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ জন নাবিক। স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১২টার দিকে দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার পর ২৩ ক্রুসহ জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে রওনা হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম।

তবে জাহাজ ও ক্রুদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কত টাকা দিতে হয়েছে তা জানা যায়নি। যদিও এ বিষয়ে রোববার দুপুরে চট্টগ্রামে কেএসআরএম গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

ওদিকে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তির পর ক্রুরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের মা শাহানুর আক্তার বলেন, ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

গত ১২ই মার্চ কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাওয়ার সময় জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আব্দুল্লাহ। জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের কাছাকাছি অবস্থান করছিলো।

এদিকে জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর আলোচনার মাধ্যমে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করার চেষ্টার কথা জানিয়েছিলো জাহাজটির মালিক কর্তৃপক্ষ। পরে বিভিন্ন সময় আলোচনায় অগ্রগতির কথাও জানানো হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত আলোচনায় মুক্তিপণের পরিমাণ চূড়ান্ত হওয়ার পর শনিবার রাতে মুক্তি পেলো জাহাজ ও এর ক্রুরা।
মিজানুল ইসলাম বলেছেন, দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার আগে সোমালিয়া উপকূলে ডলার পাঠানো হয়। মুক্তিপণের অর্থ পাওয়ার পর তারা আরো কিছুক্ষণ ছিলো জাহাজে। রাত ১২টায় জাহাজটি মুক্ত হওয়ার পর দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।৫/৬ দিন পর এটি দুবাইয়ের বন্দরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে নাবিকরা কিভাবে আসবে সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, মালিক পক্ষের সাথে আলোচনার পর মুক্তিপণের জন্য নির্ধারিত ডলার ভর্তি ব্যাগ ছোট উড়োজাহাজ থেকে দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটির আশেপাশে স্পিডবোটে অপেক্ষারত দস্যুদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। যদিও মিজানুল ইসলাম বলেছেন, দস্যুদের মুক্তিপণের অর্থ দেয়া হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে।

ডলার ভর্তি ব্যাগ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জাহাজে অবস্থানরত দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। এরপর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
উল্লেখ্য, কয়লাবাহী এম ভি আবদুল্লাহ আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। ভারত মহাসাগর দিয়ে যাওয়ার সময় ১২ই মার্চ দুপুরের দিকে হঠাৎই ছোট ছোট বোট নিয়ে জাহাজের দিকে চলে আসে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। ঐ জাহাজে থাকা একজন ক্রু ঘটনার সময় একটি ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট ছোট নৌকায় করে জাহাজটিতে ওঠার চেষ্টা করে জলদস্যুরা এবং এ সময় তাদের হাতে বন্দুক ছিলো। জাহাজে ওঠার পরই সবাইকে জিম্মি করে ফেলে জলদস্যুরা। জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরই হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের মাধ্যমে মালিক প্রতিষ্ঠানকে একটি বার্তা পাঠায় জাহাজের একজন নাবিক। যাতে বলা হয়, জলদস্যুরা জাহাজ দখল করে নিয়েছে। আমাদের নাবিকেরা আটকা পড়েছেন। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ