অভিযোগ নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন বেনজীর

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০৪
...
নিজের ও পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা এবং অসত্য। তিলকে তাল বানিয়ে তার বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমি দুই বছর আগে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছি। অবসরকালীন সময়ে আমি স্বেচ্ছায় নিরিবিলি জীবনযাপন করে আসছি। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানিকর ও অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই সংবাদের সূত্র ধরে আরও কিছু পত্রিকা অসত্য সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে মূলধারার সংবাদ মাধ্যম এই অসত্য ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আমার অবসরের দুই বছর পর আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কেন এই ধরনের অসত্য ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশিত হলো আমি সেই আলোচনায় সচেতনভাবেই যাবো না। আমার এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ করা নয় এবং কারও বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর নয়।

শুধুমাত্র নৈতিক ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি আমার কথাগুলি বলবো। তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদ দুইটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছি। প্রকাশিত সংবাদে মোট ৪৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কল্পনাপ্রসূত। সংবাদে দুইটি বিষয়কে সাতবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। দুইটি বিষয়কে ভুলভাবে বিকৃত করে প্রকাশিত করা হয়েছে। দশটি অভিযোগকে ভুলভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তিল থেকে শুধু তাল নয় তাল গাছের ঝাড় বানিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

কৃষিতে শত কোটি টাকা বিনিয়োগের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, আমার জন্ম শহর গোপালগঞ্জে। ২০১৪ সাল থেকে আমাদের পারিবারিক কৃষি খামারে বিনিয়োগ আছে। বিগত দশ বছর থেকে আমাদের পারিবারিক কৃষি খামারে বিনিয়োগ ও ব্যবসা চলে আসছে। প্রথমে সেখানে আমাদের পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করে। সেই খামারের আয় থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসা বৃদ্ধি হয়। পরে সেখানে বিভিন্ন ফলদ, বনজ, ঔষধি ও মসলা জাতীয় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ব্যাপক বনায়ন করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য শত কোটি টাকার প্রয়োজন হয় না। এই প্রকল্প নিয়ে পরিবেশিত সংবাদের যে ধরনের ভূমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে তা সত্য নয়। এই খামারে যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে তার থেকে বেশি পরিমাণে টাকা আমার পরিবারের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। ব্যবসা থেকে আয় এবং ব্যাংক ঋণের টাকা দিয়ে তারা ধীরে ধীরে এ ব্যবসা গড়ে উঠেছে। এই ব্যবসার জমির পরিমাণ এবং টাকার পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে লিপিবদ্ধ আছে।

স্ত্রী’র শত কোটি টাকার ব্যবসা নিয়ে তিনি বলেন, আমি সরকারি চাকরি করলেও আমার স্ত্রী ও আমার পরিবারের সদস্যদের ব্যবসা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আমার সরকারি চাকরি কখনোই তাদের ব্যবসা করা এবং সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমার স্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিজনক তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। আমার স্ত্রীর বাবা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং তার পরিবারের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠিত। আমার স্ত্রী বিগত ২৪ বছর ধরে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসার আয়ের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে আসছে। পরিবেশিত সংবাদে আমার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। ফলে ব্যক্তি গোপনীয়তার বিষয়টি খুবই চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নিয়ে তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদে আমার এবং আমার পরিবারের ঢাকা এবং ঢাকার বাহিরের যে সম্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার কাছে যে বিঘার পর বিঘা জমি আছে বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পূর্বাচলে চল্লিশ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই। পূর্বাচলে কথিত ডুপ্লেক্স বাড়ির পাশে ১০ কাঠা জমি আছে বলা হয়েছে তাও মিথ্যা।

বেনজীরের আয় এবং পারিবারিক ব্যবসার বিনিয়োগ আকাশচুম্বী, প্রকাশিত সংবাদের অভিযোগের বিষয়ে সাবেক আইজিপি বলেন, আমার ৩৫ বছরের চাকরি জীবনের বেতন-ভাতার যে কাল্পনিক হিসাব প্রকাশিত সংবাদে করা হয়েছে তাও ভুল। প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে আমার অবসরের পর থলের বিড়াল বের হয়ে এসেছে। এ ধরনের শব্দ প্রয়োগ খুবই আপত্তিকর। আমারদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সাল থেকে চলে আসছে জনসম্মুখে। আমাদের মৎস্য প্রজেক্ট জাতীয় পর্যায়ে একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে। এটি একদিনে হয়নি, আমার পরিবারের সদস্যদের বছরের পর বছর শ্রম ও ঘামের মধ্যদিয়ে এটি হয়েছে।

গোপালগঞ্জে সাভানা এগ্রো প্রজেক্ট ২৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এই অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দুইটি কোম্পানিতে ২৫ কোটি টাকা আমার পরিবার বিনিয়োগ করেছে। এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই দুটি প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল ব্যাংক লোন থেকে। যাতে করে ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করা যায়। কিন্তু বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক লোন আর স্যাংশন হয়নি। ফলে এই দুটি কোম্পানি এখন পর্যন্ত ব্যবসাতে আসতে পারেনি। প্রকল্প এলাকার নাম ‘বেনজীরের চক’ এই অভিযোগ নিয়ে সাবেক এই আইজিপি বলেন, প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে আমাদের পারিবারিক প্রকল্প এলাকার নাম বেনজীর চক। এটি আসলে মিথ্যা। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় যে প্রকল্প এলাকায় মিটার ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে এটিও মিথ্যা। সেখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে আমাদের পরিবার তাদের প্রকল্পতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খুলেছে তার বিল সরকারকে দিয়ে আসছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয় চাপ দিয়ে জমি কেনা হয়েছে এটিও মিথ্যা তথ্য।

মগবাজার ও আনন্দ হাউজিং-এ ফ্ল্যাট-বাড়ি রয়েছে, প্রকাশিত সংবাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মগবাজারে আমাদের ফ্ল্যাট রয়েছে। এটি আসলে একটি মিথ্যা তথ্য। এ ছাড়া আনন্দ হাউজিং-এ যে পরিমাণ জমি ও বাড়ির কথা বলা হয়েছে সেটিও মিথ্যা। আইজিপি থাকাকালীন পূর্বাচলে ১০ কোটি টাকার প্লট কেনা নিয়ে বলেন, আমি দশ কোটি টাকা দিয়ে পূর্বাচলে একটি প্লট কিনেছি। এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। সরকারিভাবে ১০ কাঠার একটা প্লট পেয়েছিলাম সেটিও আমরা পারিবারিক কারণে বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে পূর্বাচলে আমাদের কোনো প্লট নেই।

রূপগঞ্জে দুই বিঘা জমি ও বসুন্ধরায় মেয়ের জন্য ফ্ল্যাট আছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রূপগঞ্জে আমাদের দুই বিঘা জমি আছে বলা হয়েছে সেটিও একটি মিথ্যা তথ্য। রূপগঞ্জে আমাদের কোনো জমি নেই। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয় আমার জ্যেষ্ঠা কন্যার বিশ্রামের জন্য বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছি। আসলেই তথ্য সঠিক নয় সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা আমার সরকারি বাসা থেকে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতো। তার বিশ্রামের জন্য কোনো ফ্ল্যাট কেনার প্রয়োজন বোধ আমরা করিনি। তবে বসুন্ধরায় নির্মাণ হয়নি এমন একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। কিন্তু বসবাসের উপযোগী নয় বলে সেটিও আমরা বিক্রি করে দিয়েছি। ফ্ল্যাটে একটি দরজার দাম ৫০ লাখ টাকা বলা হয়েছে। সেই তথ্যও ভুল।

ভিডিও বার্তার বাইরে বিকালে তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পত্তির তালিকায় আরও ৩টি সম্পদের বিষয় উল্লেখ আছে। যে বিষয়ে স্পষ্টকরণ জরুরি বলে প্রয়োজন মনে করি। প্রতিবেদনে কক্সবাজারের রামাদা হোটেল, ভাওয়াল রিসোর্ট ও বনানীর ইউনিক হোটেলে আমাদের বিনিয়োগ-মালিকানা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য এই যে, এই তিন সম্পত্তি-প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনো মালিকানা বা বিনিয়োগ নাই। আমাদের মালিকানা প্রমাণসাপেক্ষে এই ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ইতিপূর্বে প্রদত্ত বিনা পয়সায় লিখে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে অন্তর্ভুক্ত।

সর্বশেষ